প্রথমে "জায়েজ" (جائز) কথাটির অর্থ বুঝতে হবে। এর অর্থ হলো অনুমোদনযোগ্য। যে কাজটি নিষেধ করা হয়নি, সেটাই জায়েজ। তবে জায়েজ হলেই সেটি ভালো কাজ হয়ে যায় না।
আল্লাহ আমাদের রব (رب), আমাদের পালনকর্তা। তিনি আমাদের সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেন, এবং আমরা তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
**ইয়া কানাবুদু ওয়া ইয়া কানাস তাঈন** (اِیَّاكَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاكَ نَسۡتَعِیۡنُ) – "আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই"। – (সুরা ফাতিহা: ৫)
পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো মুসলিম নেই, যে এই বাক্যটি মুখস্থ করেনি। এটি সুরা ফাতিহার একটি আয়াত, যা সবাই মুখস্থ করেছে এবং বারবার বলেছে - **ইয়া কানাস তাঈন** (তোমারই কাছে সাহায্য চাই)।
এখানে "তোমারই" শব্দের মধ্যে "ই" অক্ষরটির অর্থ হলো কেবলমাত্র তোমার। অর্থাৎ, আমরা শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাই।
মনে রাখবেন, আপনি শুধু আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে পারবেন, এতে কোনো নাজায়েজ কিছু নেই। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়াটা আপনার অধিকার। তবে, সাহায্য চাইবার সময় এমন কিছু বলবেন না, যাতে আল্লাহর মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।
ধরুন, আপনার পরীক্ষার ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ চলে এসেছে, অথচ আপনার কাছে কোনো টাকা নেই। এই পরিস্থিতিতে আপনি আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতে পারেন:
"আল্লাহ, আমি যদি এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষার ফি জমা দিতে না পারি, তবে আমি পরীক্ষা দিতে পারবো না। আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করো এবং আমার জন্য টাকার ব্যবস্থা করে দাও।"
এই একই কথাটি অন্যভাবেও বলা যায়, যেমন:
"আল্লাহ, তুমি এক সপ্তাহের মধ্যে আমার পরীক্ষার ফি এর টাকার ব্যবস্থা করে দাও।"
দুটি কথার অর্থ এক হলেও পার্থক্য আছে সম্মান ও মর্যাদায়। প্রথম কথায় আপনি অসহায়ভাবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছেন, আর দ্বিতীয়টিতে আপনি আল্লাহর কাছে দাবী জানাচ্ছেন। এটাই সম্মান ও মর্যাদার পার্থক্য।
মনে রাখবেন, আপনি আল্লাহর বান্দা, তাঁর দাস। আল্লাহই আপনার প্রয়োজনীয় জিনিস দান করেন, আর আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আপনি সবসময় আল্লাহর কাছে নির্ভরশীল, অসহায়।
তাই আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন, বারবার চাইবেন। তবে আপনার চাওয়ার ভঙ্গিমায় যেন দাবি নয়, বরং আপনার অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে।
অবশ্যই, আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক যেখানে আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য চাইবার সঠিক ও সম্মানজনক পদ্ধতি বোঝানো হয়েছে:
### উদাহরণ ১: স্বাস্থ্যগত সমস্যা
ধরুন, আপনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। চিকিৎসা চলছে কিন্তু উন্নতি হচ্ছে না। এই অবস্থায় আপনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন:
**ভুল পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, যদি আমাকে সুস্থ না করো, তাহলে আমি আর কাজ করতে পারবো না।"
এখানে আপনি যেন আল্লাহকে শর্ত দিচ্ছেন বা দাবি করছেন, যা সম্মানজনক নয়।
**সঠিক পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, তুমি যদি চাও, আমাকে সুস্থ করে দাও। আমি তোমার দয়া ও সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করছি।"
এইভাবে আপনি আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে সাহায্য চেয়েছেন।
### উদাহরণ ২: চাকরি বা রিজিকের সমস্যা
আপনার চাকরি চলে গেছে বা দীর্ঘদিন ধরে কাজ খুঁজছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারেন:
**ভুল পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, তুমি যদি আমাকে চাকরি না দাও, তাহলে আমি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবো?"
এখানে যেন আপনি আল্লাহকে দায়ী করছেন বা শর্ত দিচ্ছেন, যা সম্মানের পরিপন্থী।
**সঠিক পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, আমার রিজিকের দরজা খুলে দাও। তুমি আমার সবকিছুর উৎস। আমি তোমার রহমতের জন্য অপেক্ষা করছি।"
এখানে আপনি বিনীতভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন এবং তার রহমতের উপর নির্ভর করছেন।
### উদাহরণ ৩: পরিবারে শান্তির জন্য
পরিবারে অশান্তি বা সমস্যা হচ্ছে, আপনি আল্লাহর কাছে শান্তি ও সমাধানের জন্য দোয়া করছেন:
**ভুল পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, যদি তুমি আমার পরিবারের সমস্যা সমাধান না করো, তাহলে আমাদের শান্তি থাকবে না।"
এখানে আপনি আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর সন্দেহ প্রকাশ করছেন এবং একটি দাবির মতো করে বলছেন।
**সঠিক পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, তুমি আমাদের পরিবারে শান্তি ও সমঝোতা ফিরিয়ে দাও। তুমি শান্তির উৎস, আমাদের উপর তোমার রহমত বর্ষণ করো।"
এভাবে, আপনি আল্লাহর কাছে বিনম্রভাবে প্রার্থনা করছেন, যা সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ।
### উদাহরণ ৪: পরীক্ষায় সফলতার জন্য
আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন এবং সফলতা পেতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছেন:
**ভুল পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, যদি আমি এই পরীক্ষায় পাস না করি, তাহলে আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।"
এখানে আপনি আল্লাহর উপর অতিরিক্ত চাপ দিচ্ছেন বা দাবি করছেন।
**সঠিক পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, তুমি আমাকে সফলতা দাও। তুমি জানো কোনটা আমার জন্য ভালো, আমি তোমার উপর নির্ভর করছি। আমার প্রচেষ্টাকে সফল করো।"
এখানে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য চাইছেন বিনীতভাবে এবং তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হচ্ছেন।
### উদাহরণ ৫: সন্তান-সন্ততির জন্য দোয়া
আপনার সন্তানদের জন্য মঙ্গল কামনা করতে চাইছেন, বিশেষ করে তাদের সঠিক পথ দেখানোর জন্য:
**ভুল পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, যদি তুমি আমার সন্তানদের সঠিক পথে না রাখো, তাহলে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।"
এখানে আপনি আল্লাহর সাথে কৌশলে দাবী করছেন, যা শোভনীয় নয়।
**সঠিক পদ্ধতি:**
"আল্লাহ, তুমি আমার সন্তানদের হেদায়েত দাও। তুমি তাদের হৃদয়কে তোমার পথে পরিচালিত করো এবং তাদের জন্য যা ভালো, সেটি দাও।"
এইভাবে আপনি আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে দোয়া করছেন, যা সম্মানজনক।
---
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার সময় ভাষায় বিনম্রতা ও সম্মান বজায় রাখা উচিত। আল্লাহ আমাদের দয়ালু ও মহান, তাই তাঁর কাছে সাহায্য চাইবার সময় সবসময় আমাদের অসহায়ত্ব ও নির্ভরশীলতা প্রকাশ করা উচিত।