অনেকেই মনে করে যে, আল্লাহ মানুষকে ইবাদত করানোর ভেতরে তার নিজের কোনো স্বার্থ বা চাহিদা আছে। এ ধরনের ধারণা তৈরির কারণ হচ্ছে, মানুষ নিজস্ব স্বার্থে সবকিছু উদ্ভাবন করেছে। যেমন, মানুষ গাড়ি উদ্ভাবন করেছে দ্রুত চলাচলের জন্য। টেলিফোন উদ্ভাবন করেছে দূর থেকে কথা বলার জন্য। সবকিছুতেই মানুষের নিজস্ব প্রয়োজন বা চাহিদা রয়েছে।
এই চিন্তাধারা থেকেই প্রশ্নকারী মনে করে, হয়তো আল্লাহও মানুষকে তার কোনো চাহিদা পূরণের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং ইবাদত করাচ্ছেন। কিন্তু এখানে দুটো বিষয় প্রশ্নকারী ভুলে গেছে—
প্রথমত, আল্লাহর ইবাদতে আল্লাহর কোনো উপকার বা লাভ হয় না।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহর তো অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছে যারা তার ইবাদত করে, তাহলে মানুষকে দিয়ে কেন ইবাদত করানো হলো?
এই দুটি প্রশ্নের উত্তর জানলেই বোঝা যাবে আসল ব্যাপারটি। কোরআনের সুরা জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি মানুষকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আবার, সুরা ইখলাসের ২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। অর্থাৎ, মানুষের ইবাদত আল্লাহর কোনো কাজে লাগে না। আল্লাহর কোনো কিছু প্রয়োজন নেই।
এখন প্রশ্ন আসে, ফেরেশতা থাকতে মানুষকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা কেন? এটি আল্লাহর অসীম ক্ষমতার একটি নিদর্শন। ফেরেশতারা যন্ত্রের মতো—যে কাজের জন্য তারা সৃষ্টি হয়েছে, তা ছাড়া তারা অন্য কিছু করতে পারে না। তারা আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু মানুষ এমন একটি সৃষ্টিকে আল্লাহ বানিয়েছেন, যাদের আদেশ অমান্য করার ক্ষমতা আছে। তবুও মানুষ স্বেচ্ছায় আল্লাহর ইবাদত করে। এটি আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রকাশ।
মানুষের বিশেষত্ব এই যে, তারা বাধ্য না হয়েও আল্লাহর ইবাদত করে। আল্লাহ চান যে, মানুষ স্বেচ্ছায় তার আদেশ মানবে, কোনো যন্ত্রের মতো বাধ্য হয়ে নয়। এটি আল্লাহর ক্ষমতার প্রকাশ যে, তিনি এমন সৃষ্টিকে বানিয়েছেন, যারা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকার পরেও তার ইবাদত করে।
তাই, মানুষকে দিয়ে ইবাদত করানো আল্লাহর কোনো চাহিদা পূরণ নয়। এটি তার অসীম ক্ষমতার নিদর্শন যে, মানুষ ইবাদত করে স্বেচ্ছায়, যন্ত্রের মতো বাধ্য হয়ে নয়।